বাংলাদেশের পর্যটনদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি পর্যটক স্থান কুয়াকাটা। যেটা পটুয়াখালি জেলাতে অবস্থিত।
কুয়াকাটাকে বলা হয় সাগর কন্যা, এর অপরূপ সৌন্দর্য, স্থান এবং ভোরে সূর্য্যদয় ও সন্ধ্যা সূর্যউদয় পর্যটকদেরসাগর কন্যা কুয়াকাটা ভ্রমন। বিশেষ আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।তাই আজকে কথা বলবো কুয়াকাটা ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়ে, কোথায়, কিভাবে ঘুরবেন, কত খরচ হবে সকল বিস্তারিত।
আপনি যেকোন স্থান থেকে কুয়াকাটা পৌছানোর পর, আপনার প্রথম কাজ হোটেলে রুম নেওয়া।আপনি আপনার চাহিদা মত খরচে রুম পেয়ে যাবেন। আমরা ৪ জন থাকার জন্য ২ বেড, একটি রুম নিয়েছিলাম খরচ পড়েছিলো 5500 ৳ টাকা, সেটাও অনেক দামাদামি করার পর। আপনি সিঙ্গেল রুম 1500৳ / কাপল রুম 3000৳ তে অনেক ভালো মানের হোটেলে রুম পেয়ে যাবেন।তবে ননসিজনে গেলে খরচ পুরো অর্ধেকে নেমে আসে।
তারপর রুমে জিনিস পত্র রেখে, কেবল মোবাইল, মানিব্যাগ বা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম সকালের সূর্যোদয় দেখার জন্য, এবং সেটা দেখার জন্য কুয়াকাটা বিচ থেকে ৫০৳ জন প্রতি বাইক ভাড়া দিয়ে, সূর্যোদয় স্পটে গিয়েছিলাম, তবে তেমন মন জুড়ানো কিছু দেখতে না পেয়ে বিচ পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে এসেছিলাম।যেটা ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত, কেননা দূরত্ব বেশ কিছ পথ। তখন অবশ্য সকালের আলো ভালো-ভাবে ফুটে উঠেছিল।সেখান থেকে সকালের নাস্তা করে, বেরিয়ি পড়লাম কুয়াকাটা সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
প্রথমে বাইক ভাড়া করে, চলে গেলাম কুয়াকাটা মিনি সুইজারল্যান্ড দেখতে,জায়গাটা যেন সবুজের সমারোহ, খুবই অসাধারণ একটি জায়গা,সাথে রয়েছে সবুজ, সবুজ গাছের সমারোহ। আপনি ভ্রমণ পিপাসু হলে, আপনার পছন্দ হতে বাধ্য করাবে এবং আপনাকে সকল দুঃখ - কষ্ট ভুলিয়ে দেবে।তারপর মিনি সুইজারল্যান্ড থেকে যে রাস্তা ধরে এসেছি, ফেরার পথে একই রাস্তা দিয়ে আসার সময় দেখতে পাবেন এখানের সুন্দর সুন্দর বেশ কয়েকটি জায়গা, তার মধ্যে অন্যতম "গঙ্গামতি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বন"। অনেকে একে মরা বন বলে,তার কারণ এখানে অনেক মরা গাছ দেখা যায়।তবে জায়গা অসাধারণ সুন্দর এবং এক আলাদা অনুভুতি দেয়,কেননা জায়গাটা খুবই নিরিবিল এবং সাগরের মধ্যে এমন মরা গাছ, এই কুয়াকাটা ছাড়া অন্য কোথাও দেখেছি বলে মনে পরে না।এরপরে ২ মিনিট সামনে গিয়ে পেলাম " গঙ্গামতি লেক ভিউ ক্যানেল" অনেক সুন্দরও একটি স্থান, এখান থেকে আপনি সমুদ্রের সৌন্দর্য আরও কাছ থেকে উপভোগ করতে পারবেন। তারপর সোজা চলে আসলাম, কুয়াকাটা মেইন বিচে, এবং সময় সকাল ১০:০০ বাজলো।তখন বন্ধুদের সাথে কুয়াকাটা পানি তে গোসল এবং অনেক মজা করি।তারপর দুপুরের ডিনার শেষে পুনরায় কুয়াকাটা অন্যান্য জায়গা ভ্রমণের উদ্দেশ্য বের হলাম।
আমরা চলে গেলাম কুয়াকাটা শুটকি পল্লি'তে,সেখানে অনেক রকমের মাছের শুটকি দেখতে পেলাম। লোকাল শহরের থেকে, দাম অনেক'টা কমে পাওয়া সম্ভব কুয়াকাটা শুটকি পল্লীতে।তারপর সেখান থেকে, আমরা চলে গেলাম কুয়াকাটা সবচেয়ে সুন্দর এবং জনপ্রিয় জায়গা - চর বিজয়।যেটা জন্য কুয়াকাটা এত জনপ্রিয়। সেখানে যেতে আমাদের একটি স্প্রিড বোর্ড ভাড়া করতে হয়েছিলো খরচ পড়েছিল, 6000৳ হাজার টাকা(Up-Down). এবং যেতে সময় লেগেছে 30/35 মিনিট। চর বিজয় তে আছে লাল কাকরা, অনেক রকমের অতিথি পাখি এছাড়াও এক অনন্য সুন্দর একটি জায়গা এই চর বিজয়।
চারিদিকে সমুদ্রের মাঝে একটি চর, নেই কোন বসতি, না আছে কোন মানুষ,খুবই নিস্তব্ধ একটি জাযগা এই চর বিজয়।সেখানে অনেক কিছু উপভোগ করছে এবং সেখানে বেশ কিছু সময় পার করার পর তারপর আবার ফেরত আসতে আসতে সন্ধ্যা।
তখন অবশ্য কুয়াকাটা মেইন বিচ পাশে এক মেলা বসেছে, যদিও সে মেলা বিকাল থেকে বসে,সেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের তাঁতের কাপুর, শুটকি মাছ, নানান - রকম বাহারের খাবারের সাথে প্রয়োজনী সকল জিনিস পেয়ে যাবেন, যা আপনি স্মৃতি হিসাবে কিনে রাখতে চায়বেন।
আমাদের কুয়াকাটা ভ্রমণ অবশ্য এখানেই শেষ। আমরা আমাদের হোটেলে চলে যায়, সেখানে কিছু সময় রেস্ট করে, রাতে ডিনার শেষে, মধ্যরাতে বাসে উঠে পড়ি।এবং কুয়াকাটা'কে বিদায় জানিয়ে দি..!
এর বাইরেও আরও অনেক স্পট রয়েছে, যা আপনি কুয়াকাটা ঘুড়ে দেখতে পারবেন।
কুয়াকাটা মোট ১৮ টি প্যালেস রয়েছে, যার মধ্যে পুর্বদিকে ১২ প্যালেস এবং পশ্চিমে রয়েছে ৬ টি প্যালেস।
সকালে পূর্বদিকে সূর্যদয় দেখাসহ আপনি একবারে ১২ টি প্যালেস ঘুরে দেখে আসতে পারবেন, সকাল ৪:৩০ মিনিটে বের হলে, সব ঘুড়ে কুয়াকাটা মেইন বিচ আসতে সকাল 9;30 - 10;00 বাজবে।পূবদিকে উল্লেখযোগ্য প্যালেস "লাল কাঁকড়া চর, বোদ্ধ মন্দির, রাখাইন পল্লী, তাঁত পল্লী, গঙ্গমতি চর, জাতীয় উদ্যান ও মিষ্টি পানির কূপ সহ আরও কিছু।
এরপর দুপুরের খাবার শেষে বিকালে পশ্চিম দিকে ৬ টি প্যালেসে ঘুরে দেখে আসতে পারবেন, তার মধ্যে রয়েছে -
শুটকি পল্লি, লেবুর বন, ঝিনুক বিচ, তিন নদীর মোহনা, এছাড়াও সুন্দরবনের পূর্ব অংশ। এবং লেবুর বনে বসে আপনি সূর্যস্ত অনেক সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে পারেন,, কুয়াকাটা ঘুড়েতে গেলে যেটা অবশ্য বলবো মিস করা উচিত নয়।
তো এই ছিলো আমার কুয়াকাটা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, কুয়াকাটা সম্পর্কে এর বাইরেও কোন তথ্য জানতে চায়লে অবশ্যয কমেন্ট করে জানাবেন, তার উত্তর জানা থাকলে অবশ্যয় আমি জানাবো।