পরিশ্রম মানুষকে ঠকায় না বরং সঠিক সময়ে সেরা উপহার দেয়।

 পরিশ্রম মানুষকে ঠকায় না বরং সঠিক সময়ে সেরা উপহার দেয়।

পরিশ্রম শব্দটি শুনলে আমারা অনেকে ভয় পায়। কেননা পরিশ্রম করতে এক অন্যরকম ধৈর্যের প্রয়োজন হয়, যা সবার মধ্যে থাকে না। পরিশ্রম করতে যেমন ধৈর্যের প্রয়োজন তেমনই ভাবে দরকার হয় কঠোর রকমের চেষ্টা, ইচ্ছা এবং আগ্রহ। 

জীবনে সফল হতে হলে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নাই, বলতে গেলে পরিশ্রম বিকল্প কেবল পরিশ্রম। 

পরিশ্রম বিভিন্ন রকমের হতে পারে, কেউ শারিরীক পরিশ্রম করে বা কেউ মানসিক। আবার কেউ ধৈর্য ধরে কোন কিছু চেষ্ট করে, সেটাও ধৈর্যের এক পরিশ্রম, যেমন পড়াশোনা৷ 

পড়াশোনা করতে অনেক ধৈর্য দরকার, ধৈর্য ধরে চেয়ার - টেবিলে বসে সফল না হওয়া পর্যন্ত পড়াশোনা করাও কঠোর এক পরিশ্রম বা অধ্যাবসায় বলা চলে। 

আর মানুষ তখনই কঠোর পরিশ্রম বা তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যখন মানুষ তার অবস্থানে সে দুর্বল হয়ে পড়ে। আর তখন সে তার সর্বোচ্চ টা দিয়ে নিজের ভিতরে থাকা প্রতিভা বা মেধা বাইরে প্রকাশ করতে পারে। 


আবার অনেকে কেবল পরিশ্রম করে সফল হতে পারে না, সাথে প্রয়োজন হয় প্রবল ইচ্ছা শক্তি এবং নিজের মেধাকে কাজে লাগানো। কেননা সব থেকে পরিশ্রম করে গাধা, সে সারাদিন শুধু খেটেই চলে, তবে দিন শেষে সে গাধায়। তাই কেবল পরিশ্রমই নয়,পরিশ্রমের সাথে চায় কঠোর অধ্যাবসায়। 

বড় বড় মনিষী গণ বলে গেছেন, পরিশ্রম কখনও বিফলে যায় না। তাই আমাদের সব সময় এই কথাটি মাথায় রেখে নিজ কাজে লেগে পড়া উচিত। কেননা পরিশ্রমের ফল আজ হোক বা কাল ঠিকই আপনি পাবেন। এবং পরিশ্রম যত দীর্ঘ হবে আপনার পরিশ্রমের ফল তত মিষ্ট হবে। তাই কোন কাজে কখনও হাল ছাড়া উচিত নয় বরং মনোবল আরও দৃঢ় করে মাটি কামড়ে থাকতে হবে। যত দিন না আপনি, আপনার সাফল্যের চূড়াই উঠতে পারছেন। মনে রাখতে হবে যে " পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি "। তাই পরিশ্রমের বিকল্প কেবল পরিশ্রমই আর ধৈর্য ধারণ করে এবং ত্যাগ শিকার করে কেবল, উন্নতির সর্বোচ্চ শিখকে পৌছানো সম্ভব। পরিশ্রম চেষ্টা করে সফল হয়েছে, এমন উদাহরণ অনেক আছে, তারমধ্যে একটি গল্প আপানাদের সাথে শেয়ার করি...


সালটা ছিলো ২০২১ সাল, তখন বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের কারণে লক-ডাউন চলছে, তার ভিতর ফারদিন নামে একটি যুবক বাড়িতে বসে এক প্রকার দুশ্চিন্তায় দিন পার করছে, কেননা তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না, তার উপর করোনা লকডাুনের কারণে তাদের কোন কাজ না থাকায়, তারা খুবই সমস্যার মধ্যে দিন পার করছে। এই অবস্থায় তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাও শেষ। সে চেয়েছিলো ঢাকা শহরে গিয়ে সরকারি চাকুরি বা বিসিএস প্রস্তুুতি নিবে তবে করোনা কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না, তার উপর তার পরিবারের এমন অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে সে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পারে। তারপর তারা শহর থেকে গ্রামে চলে যায় এবং ফারদিন গ্রামে অন্যেে জমিতে দিন মজুর হিসাবে চাষা'বাদের কাজ করে টাকা জমাতে থাকে এবং সংসারের জন্য ও খরচ  করে। সারাদিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়িতে বসে সরকারি চাকুরি জন্য পড়াশুনা করতে থাকে এবং ভোর হলে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে, আবার বই পড়তে শুরু করে। এভাবে দিনে ৭/৮ ঘন্টা পড়াশুনা এবং দিনের বেলা মাঠে কাজ করতো। তার প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রম হতো, তারপরেও সে ধৈর্য ধরে লেগে থেকে একটানা ১ বছর এভাবে সে পড়াশুনা চালিয়ে যায়।  এক সময় করোনা অবস্থা স্বাভাবিক হলে, সে এত দিনে জমানো টাকা নিয়ে ঢাকা শহরে চলে যায় এবং সেখানে একটি মেসে থাকতে শুরু করে এবং চলতে থাতে তার ননস্টপ পড়াশুনা।  প্রতিদিন কমপহ্মে ১৫ থেকে ১৬ ঘন্টা পড়াশুনা করতো সে। এভাবে সেখানে ৫ - ৬ মাস পড়াশুনা করার পর বিভিন্ন চাকরি পরীহ্মা দিতে থাকে এবং সব পরিহ্মাতে সে ভালো ফলাফল করে ভাইভা জন্য ডাক পায়। অতপর তার জীবনের প্রথম ভাইভা তে সে বিসিএস ক্যাডার হিসাবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়। হ্যা, এটি ছিলো তার বিসিএসের ভাইবা, সে প্রথম বিসিএস ভাইবা তে সফল হয়। 

আর তার এত কিছু সম্ভব হয়েছে কেবল কঠিন পরিশ্রমের কারণে, তার চেষ্টা, ধের্য ধারণ করে লেগে থাকা যা ছিলো দেখার মত। আসলেই ফারদিনের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। জীবনে কত কঠিন সময়ের মধ্যেও সে কিভাবে মানসিক এবং শারিরীক পরিশ্রম করে সফলতায় পৌছাতে পেরেছে।যা সবায় পারে না, তবে যেকেউ চায়লে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তার জীবনের উন্নতি সাধন করতে পারে। 


নিজের ভিতরেই সব :

মানুষের মস্তিষ্ক এমন ভাবে তৈরি যে, মানুষ যা চায় তাই পায়। কেউ যদি মনে করে যে, সে জীবনে এই কাজটি করবে এবং সে তা চায়। তাহলে সেটি পাওয়ার জন্য যদি কাজ শুরু করে, তাহলে অবশ্যয় একদিন না একদিন সে তার ইচ্ছা, পাওয়া এবং লহ্ম্যে পৌছাতে পারবে। শুধু তারজন্য দরকার তার মন স্থির করে, লহ্ম্য নির্ধারণ করে কাজে লেগে পড়া। যত দিন বা যত সময় সে লহ্ম্যে পৌছাতে পারবে সে সেটির জন্য কঠোর ভাবে পরিশ্রম করে যেতে হবে। পরিশ্রমের পাশাপাশি আরও একটি কাজ প্রত্যেক মানুষের করা উচিত, যা করলে মন ভালো থাকবে এবং কাজে মন বসবে তা হলো, নিজ নিজ ধর্ম পালন করা। প্রত্যকে আমরা যদি নিজ নিজ ধর্ম পালন করি, তাহলে অবশ্যয় কাজের প্রতি ভালোলাগা সৃষ্টি হবে তেমনি ভাবে সৃষ্টিকর্তার থেকেও আলাদা দো'আ আর্শীবাদ থাকবে। যা আপনার ভাগ্য পরিবর্তনে এক বিশাল অবদান রাখবে। জীবনে সফল হতে হলে আরেকটি কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া। কেননা বেশি বেলা করে ঘুম থেকে উঠলে তা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য অনেক হ্মতি করে থাকে। তেমনি আমাদের দিনের বেশির ভাগ সময় কোন কাজে ঠিক ভাবে মনে বসে না এবং কোন কিছু ঠিক ভাবে সম্পাদন করা যায় না। এছাড়াও ভোর ৪ - ৬ টা পর্যন্ত, আমাদের মস্তিষ্ক এক অন্য লেভেলে থাকে, আমরা ব্রেইনকে পুরো শতভাগ ব্যাবহার করতে পারি। যেটা দিনে অন্য কোন সময় সম্ভব নয়। তাই সফলতার আরেকটি গোপন বা সিক্রেট টিপস বলা চলে খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে, নিজের কাজে লেগে পড়া। 

যখন আপনি জীবনে সফল হবেন বা সফলতার শীর্ষে পৌছাবেন, তখন আপনার চারিপাশের পরিবেশ আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে থাকবে। আপনি তখন নিজ চোখে দেখবেন, আপনার যে প্রতিবেশি এবং আত্নীয়-স্বজনরা আপনাকে ভালো চোখে দেখতো না এবং অবহেলা করতো।তারাই এখন আপনাকে গ্রহণ করবে, সম্মান এবং মর্যাদা দেবে। আপনাকে নিয়ে ভালো কথা বলবে, আপনাকে নিয়ে গর্ব করবে। তাই নিজের পরিবেশকে নিজের অনুকুলে আনতে হলেও কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য ধারণ করে, নিজ কাজে বেশি সময় দিতে হবে।



মানুষের অবস্থান :

মানুষ সব সময় একই অবস্থানে থাকে না, যেভাবে দিন যায়, রাত আসে; আবার একে একে যেতে থাকে মাস, বছর সেভাবে ও মানুষের জীবনে অবস্থানের পরিবর্তন হতে থাকে। কখনও আপনি অনেক ধনী, অনেক টাকা পয়সা ওয়ালা সম্মানী লোক তো কখনও আপনি গরিব এবং আপনার সম্মান মাটি'তে মিশে যাবে। তাই কখনও নিজের অবস্থানে নিজেকে দুর্বল ভাবতে নেই। মানুষ চায়লে সব পারে, পরিশ্রম এবং চেষ্টা দ্বারা খুব সহজে আপনি নিজের অবস্থানের পরিবর্তন করতে পারবেন। মানুষের জীবনে সুখ যেমন আছে তেমনি দুঃখ ও আছে। সুখ - দুঃখ, মিলে মানুষের জীবন। একজন মানুষ সারা জীবন সব সময় কষ্ট করে যাবে, এমনটা কখনও সম্ভব নয়। তেমনি কেউ চায়লেও সর্ব সুখী হতে পারবে না। এটাই জগতের নিয়ম, এভাবে সব কিছু নিয়মের ভিতরে বয়ে যাচ্ছে, ঠিক যেভাবে সৃর্য পৃথীবির চারিদিকে ঘুরছে। তাই কখনো নিজের উপর আশাহত হওয়া যাবে না, যাবে না কখনো নিরাশ হওয়া। নিজের সর্বশেষ পর্যন্ত লড়ায় করার মানসিকতা থাকতে হবে, আজ হোক বা কাল অন্ধকার নেমে আলো অবশ্যয় আসবে। শুধু অপেহ্মা করতে হবে, উত্তম সময়ের, সময় সবকিছু বদলে দেবে।যার জন্য কেউ প্রস্তুত নয়। কাল কি হবে কেউ বলতে পারে না, আজ আমি বেচে আছি কাল পৃথিবীতে নাও থাকতে পারি। তাই আপনি ব্যার্থ, আর কাল আপনিই সেই সফল ব্যাক্তি। 


যেভাবে আমরা নিজেকে ঠকায় ;

আমরা জীবনে বিভিন্ন ভাবে নিজেকে ঠকায়, সেটা কাজে ফাকি দিয়ে,বা ভালো কাজের বিপরীতে খারাপ কাজ করে। বলতে গেলে, অলসতা করে যখনও কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে রেখে, ভাবি কাজ'টা পরেও করা যাবে। ঠিক তখনই আমরা নিজেকে ঠকায়। নিজের অজান্তেই নিজের অনেক বড় হ্মতি করে ফেলি। যা আমরা তখন না বুঝলেও সময় হলে সব সুদে - আসলে টের পায়। যা আমাদের জীবনে চরম ব্যার্থতায় পৌছে দেয়। জীবনে সব সময় মানুষকে কষ্ট পরিশ্রম এবং ত্যাগ শিকার করেই সফল হতে হয়। তাই কখনও কোন কাজ ফেলে রাখতে নেই। সময়ের সামান্য হ্মীণস্থায়ী আরাম - আয়েসের জন্য, নিজের সম্ভবনাময় ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়।তাই আমাদের একটা সঠিক সময়কে ধরে রেখে নিজের উপর বিশ্বাস রেখে, জীবনের সকল পিছুটান ঝেরে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত।


 সর্বদা মনে রাখতে হবে,  ধৈর্য ও পরিশ্রম কখনো মানুষকে ঠকায় না বরং উত্তম সময়ে শ্রেষ্ঠ উপহার নিয়ে আসে।


আরো পড়ুন,,

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.