একটি মিনুর গল্প

আজকে যে গল্পটি বলবো, সেটি এক মিনুকে নিয়ে।গল্পটির শুরু, আজ থেকে আরও ১ বছর আগে।



ঠিক বছর খানেক আগে, আমাদের পাশের বাসার একটি ছেলে হিমেল।সে বাজারের রাস্তা ধরে বাড়ি আসার পথে, মিনু কে দেখতে পায়। মিনু ছিলো অনেক হ্মুদার্থ। সে মিনুকে নিস্তব্ধ দেহে পড়ে থাকতে দেখে,সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে এল। বাড়িতে হিমেল সাথে তার মা এবং ছোট বোন থাকতো। তারা সবায় মিনু কে পেয়ে অনেক খুশি হয় এবং অনেক আদর যত্নে খেতে দেয় এবং তাকে থাকতে দেয়।ঠিক তখন থেকে মিনু তাদের বাড়িতে থাকে, এবং তারা তাকে আদরে বড় করতে থাকে । হিমেল সব সময় মিনুকে সঙ্গে করে রাখতো, তার সাথে রাতে মিনু ঘুমাতো। 

এভাবে একে একে দিন পেরোতে থাকলো, চলে গেলো ২/৩ মাস, মিনুও তাদের পরিবারের একজন হয়ে উঠলো। তারা কখনও মিনুকে পর ভাবে নি। কখনও তারা কেউ মিনু কে অবহেলা করে নি। মিনু যেন একটি পরিবার পেয়ে, অনেক আনন্দে দিন কাটাতে থাকে এবং সে সব সময় খেলা-ধুলা দিন পার করতে থাকে।

তবে হঠাৎ একদিন সংবাদ আসে, হিমেল কে বিদেশ চলে যেতে হবে। চলে যেতে হবে তাকে তার পরিবার সহ মিনু কে ছেড়ে।তখন হিমেল কি করবে বুঝতে না পেরে, অনেত দ্বিধাদ্বন্দে পরে যায়।তবে সবশেষে সিদ্ধান্ত নেয়,সে বিদেশ চলে যাবে, কেননা তার পড়াশুনা অনেক ভালো, একটি সুযোগ এসেছে। তাই সে তার ভবিষ্যতে কথা চিন্তা করে,হিমেল পারি দেয় প্রবাসে।আর বাড়ি তে মিনু'কে রেখে দেয়, তার মা এবং বোন হাতে।

হিমেল যাবার পর বেশ কিছু দিন সব ঠিক-ঠাক চলছিলো, তবে বিপদ আসে যখন জানা যায়, মিনু বাচ্চা দেবে।হ্যা..  মিনু এখন প্রেগনেন্ট!...

ঠিক এসময় হিমেলের মা সিদ্ধান্ত নেয়, কোন ভাবে সে মিনু-কে বাড়িতে রাখতে দেবে না।তাই সে মিনু কে বার বার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় এবং মিনু কোনভাবে বাড়ি থেকে যেতে চায় না, কেননা কোথায় বা যাবে সে?  কে আছে তার এই দুনিয়ায়!.. কে বা দায়িত্ব নেবে তার বাচ্চাদের। তাই সে বার বার ফিরে আসে, এবং এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, হিমেলের মা এবং বোনের দিকে। 
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হয়।

তবে মিনু কে অবশ্য পুনারায় সেই রাস্তায় ফিরে যেতে হয় নি, পাশের বাড়িতে একজন ঠিকই মিনুকে আশ্রয় দিয়ে, আদর - যত্নে রাখে, এভাবে কিছুদিন ভিতর মিনু বাচ্চা দেয়, এক সঙ্গে তার তিনটি বাচ্চা হয়।এ খবর অবশ্য হিমেল না জানলেও,  হিমেলের মা-বোন ঠিকই জানতে পারে।তবে এতে তাদের কোন মাথা - ব্যাথা নেই।

আর এভাবে নতুন পরিবারের মিনু তার তিন বাচ্চাদের বড় করতে থাকে,এভাবে ১৫ দিন পেরিয়ে যায়, মিনুর বাচ্চা গুলো কিছুটা বড় হতে থাকে । তখন হঠাৎ একদিন বাচ্চা গুলো রাস্তায় খেলার সময়, একটি কুকুর তার একটি বাচ্চা কে কামড়ে - মুচরে মেরে ফেলে। এতে মিনু সহ সকলে অনেক কষ্ট পায়। তাই বাকি দুই বাচ্চাকে তারা দুটি পরিবারে লালন-পালন করতে পাঠিয়ে দেয়।এবং তারা সেখানে বেড়ে উঠতে থাকে। আর এদিকে মিনু সেই আশ্রিতা হিসেবে, পাশের বাড়িতে এক কোনে থাকতে শুরু করে।
এভাবে কিছু মাস পার হবার পর, মিনুর মত নতুন এক অতিথি আসে, সেই বাড়ি তে, হ্যা মিনু মত আরেকটি ছোট্ট বিড়াল, সেই বাড়িতে আসায়।মিনু প্রতি তাদের দায়িত্ব আস্তে আস্তে কুমতে শুরু করে। আর মিনু ও হতে থাকে, বড় একা। এভাবে মিনু আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়, সবার মাঝ থেকে, কোন এক অজানা শহরে। 

এভাবে এক সময় হিমেল বিদেশ থেকে বাড়ি'তে আসে , আর জানতে পারে তার মিনু বিড়ালটি আর নাই। মিনু কোথায় হারিয়ে গেছে, তার পরিবার ও তাকে কিছু জানায় না।  এতে সে মিনু কে খুজতে থাকে কিন্তু কোথাও খুজে পায় না,সেও ধীরে ধীরে মিনু কে ভুলে যায়।সবার জীবন, স্বাভাবিক ভাবে ঠিক-ঠাক চলতে থাকে, মিনু কে নিয়ে কাউরো কোন মাথা ব্যাথা থাকে না।

এটাই জীবনে, জীবনে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন মানুষ, প্রাণী বা কত কিছু আসবে - চলে যাবে, কিন্তু সময় কখনও থেমে থাকবে না, জীবন কখনও বাঁধা থাকবে না। জীবনও তার গতীতে চলতে থাকবে।

মিনু যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল, তারাও নতুন ছোট একটি বিড়াল পেয়ে, মিনুকে ও ভুলে গিয়েছিল। তাদের বাড়িতে ও বড় হতে থাকে, নতুন একটি বিড়াল নাম - মিনি। সেই মিনি বিড়াল ও, তাদের অনেক আদর - যত্নে বড় হতে থাকে। 
Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.